পাঁচ পোয়ার দুর্গা প্রতিমা, ৪০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো দেখতে আসতেন শরৎচন্দ্র

একচালার পাঁচ পোয়া মাপের দুর্গা প্রতিমার কোনও পরিবর্তন আজও হয়নি। নবমীতে চাল কুমরো বলি দেওয়ার প্রথা আছে।

পাঁচ পোয়ার দুর্গা প্রতিমা,  ৪০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো দেখতে আসতেন শরৎচন্দ্র

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: ভাঙচোরা ঠাকুর দালান সংস্কার শুরু হয়েছে। এদিকে-ওদিকে কয়েকটি মন্দির জমিদারির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। দেখলে মনে হবে পোড়োবাড়ি,আমা ধরা ইট, পলেস্তারা খসে পড়েছে, গাছপালার জঙ্গলে ছড়িয়ে রয়েছে মন্দির ভগ্নপ্রায় বাড়ির একাংশ,ঠাকুর দালান।

স্তম্ভের উপরে ছাদ ভেঙে পড়ায় দালানের কিছুটা অংশে নতুন ছাদ ঢালা হয়েছে। তার তলাতেই হয় পুজো। একটা সময় দেবানন্দপুরে জমিদারি ছিল দত্ত মুন্সিদের। ১৫৮১ সালে কনৌজ থেকে এদেশে এসে জমিদারি পত্তন করেন দত্ত মুন্সিদের পঞ্চদশ পুরুষ কামদেব দত্ত। কামদেবই দুর্গা পুজোর সূচনা করেন।

মূলত কাঠের ব্যবসায় প্রতিপত্তি বেড়েছিল দত্ত মুন্সিদের। সেই সময় সপ্তগ্রাম বন্দরে সরস্বতী নদী দিয়ে বানিজ্য হত। সেই সরস্বতী নদীর পূর্ব প্রান্তে দেবানন্দপুর বর্ধিঞ্চু গ্রাম হিসাবে পরিগনিত হত।
 দত্ত মুন্সিদের পুজোই ছিল আসে পাশের গ্রামের মানুষজনে একমাত্র পুজো। তাই এই পুজোকে কেন্দ্র করে পুজোর দিনগুলিতে উৎসবে মেতে উঠত গ্রামের মানুষরা। পরিবার বড় হয়েছে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে দত্ত মুন্সিদের পরিবারদের সদস্যরা। পুজোর সময় কেউ কেউ আসেন পূর্বজনদের হাতে শুরু হওয়া দুর্গা পুজো দেখতে।

বর্তমানে সেই পুজোর জৌলুস হারিয়েছে। তবে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে এই পুজো। দত্ত মুন্সিদের তিনটি পরিবার। বড় বাড়ি। নতুন বাড়ি ও ফুলিরতলা বাড়ি। পালা করে পুজোর দায়িত্ব নেয়। একচালার পাঁচ পোয়া মাপের দুর্গা প্রতিমার কোনও পরিবর্তন আজও হয়নি। নবমীতে চাল কুমরো বলি দেওয়ার প্রথা আছে। দশমীতে দত্ত মুন্সি পরিবারের মহিলারা ঠাকুর বরণ করে সিঁদুর খেলে। তারপর হয় বিসর্জন।

শোনা যায়, আগে জমিদার গিন্নিরা বজরা করে স্নান করতে যেতেন ত্রিবেনীতে। তাঁদের জন্য তৈরী করা ছিল জেলে ঘাট। সরস্বতী নদীর সেই জেলে ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়। বিসর্জনে যাওয়ার আগে গ্রামের বিশালক্ষ্মী মন্দির ও কালী মন্দিরে থামে প্রতিমা। দেবানন্দপুর কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান। বলতে গেলে শরৎচন্দ্রের গ্রামের পুজো ছিল দত্ত মুন্সিদের পুজো। বর্তমানে দত্ত মুন্সিদের বংশের যারা জীবিত আছেন তাঁরা বলেন, ''তাঁদের পূর্বপুরুষের কাছে শুনেছেন। এই পুজো দেখতে আসতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।''