পশুপাখি, শিকারের বদলে ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম, ঘুরতে যাওয়ার উইশ লিস্টে রাখুন শিউলিবনা গ্রাম

শীতের শিউলিবনায় চেন্নাই এক্সপ্রেস এবং এই ছবিগুলি মূল আকর্ষণ। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামে ছিল একসময় জলকষ্ট থেকে শুরু করে রাস্তার যাতায়াতের সমস্যা। আদিবাসী শিশুরা পেত না পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ। বিস্তারিত জানুন...

পশুপাখি, শিকারের বদলে ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম, ঘুরতে যাওয়ার উইশ লিস্টে রাখুন শিউলিবনা গ্রাম
নিজস্ব চিত্র

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: বাঁকুড়ার শিউলিবনা গ্রামে আদিবাসী দেওয়াল চিত্রে চিরাচরিত শিল্পকলার পাশাপাশি বিশ্বায়নের ছোঁয়া। বাঁকুড়ার এই ছোট্ট শিউলিবনা গ্রামের মাটির দেওয়ালে আঁকা রয়েছে চেন্নাই এক্সপ্রেস। আবার কোনও দেওয়ালে অঙ্কিত রয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইউটিউবের লোগো। আদিবাসী গ্রামে সচরাচর এমন ছবি দেখা যায় না। পাহাড়ের নীচে ছবির মত এক জীবন্ত গ্রাম শিউলিবনা। 

পর্যটকরা কমবেশি এই গ্রামকে "উইশ লিস্টে" রাখেন। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রাম থেকেই খুব সুন্দরভাবে দেখা যায় শুশুনিয়া পাহাড়। বাঁকুড়া জেলার ছাতনা ব্লকের শিউলিবনা গ্রামে প্রাকৃতিক এবং আঞ্চলিক সৌন্দর্য ছাড়াও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। গ্রামের সব-কটি না হলেও অধিকাংশ বাড়ি মাটির তৈরি। আর এই মাটির বাড়িগুলির দেওয়ালে আঁকা রয়েছে রঙিন ছবি। কোথাও ফুল, বাগান, পশু-পাখি আবার কোথাও শিকারের গল্প। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল আস্ত একটি মাটির বাড়ির পুরো দেওয়াল জুড়ে আঁকা রয়েছে একটি ট্রেন। বড় বড় করে ইংরেজি হরফে লেখা "চেন্নাই এক্সপ্রেস"। 

শীতের শিউলিবনায় চেন্নাই এক্সপ্রেস এবং এই ছবিগুলি মূল আকর্ষণ। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামে ছিল একসময় জলকষ্ট থেকে শুরু করে রাস্তার যাতায়াতের সমস্যা। আদিবাসী শিশুরা পেত না পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ। কিন্তু এক সাধক পর্ণকুটির বানিয়ে শিউলিবনা গ্রামে বাস করতে শুরু করেন। গ্রামবাসীরা তাঁকে "জহার ধারতী বাবা" বলে ডাকতেন। তাঁর আসার পর থেকেই গ্রামের রূপ পরিবর্তন হয়েছে। তৈরি হয়েছে রাস্তা, দূর হয়েছে জলকষ্ট। বর্তমানে শিউলিবনা গ্রাম ধীরে ধীরে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে দেওয়াল অঙ্কন যেন "চেরি অন টপ"। শিউলিবনা গ্রামে আদিবাসী দেওয়াল চিত্রে চিরাচরিত শিল্পকলার পাশাপাশি লেগেছে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। তবে একেবারে নিখুঁত গ্রামবাংলার স্বাদ পেতে হলে এই পাহাড় পাদদেশের গ্রামে যেতেই হবে আপনাকে। 

গ্রামবাসী এবং অঙ্কনকারী অঞ্জলী মুর্মু জানান, অঙ্কন করতে ব্যাবহার করা হয়েছে খড়িমাটি ও রান্নার হাঁড়ির গায়ে থাকা ভুঁসো কালি। তাছাড়াও বাজার থেকেও কিনে আনা হয়েছে কিছু রং। বছরের শুরুতেই এই গ্রামে 'খেরওয়াল তুকৌ' উৎসব হয় অর্থাৎ আদিবাসীদের মিলন উৎসব। তখনও গ্রামের মাটির বাড়ির দেওয়ালে আঁকা হয়েছিল বেশকিছু ছবি। গ্রামটি যাতে সুন্দর দেখায় ও আসন্ন 'বাদনা পরব'কে মাথায় রেখে এই দেওয়াল অঙ্কন করা চলছে বলে জানান তিনি।