মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই-বোনের ভালোবাসা দিচ্ছে কর্তব্যের বার্তা

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। পঞ্জিকা মেনে উৎসবের একেবারে শেষলগ্নে পৌঁছে গিয়েছি আমরা।

মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই-বোনের ভালোবাসা দিচ্ছে কর্তব্যের বার্তা

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। পঞ্জিকা মেনে উৎসবের একেবারে শেষলগ্নে পৌঁছে গিয়েছি আমরা। আজ শুভ ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। দাদা-ভাইদের মঙ্গল কামনায় ফোঁটা দিচ্ছেন দিদি-বোনেরা। কিন্তু নাই বা দিলাম ভাইফোঁটা, তা বলে কি কমে যাবে ভাইবোনের এই মিষ্টি ভালোবাসা। একদমই নয়। তেমনই এক ছবি ধরা পড়ল নদীয়ার শান্তিপুরে। শহরের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন এই দুই ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক কোথাও যেন হার মানিয়ে দেয় সভ্য সমাজের ভেকধারি ভালোবাসাকে। 

 নদীয়া জেলার শান্তিপুর শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ানো ময়না টাপুকে অনেকেই দেখে থাকবেন। দুজনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তবুও অটুট রয়েছে ভাইবোনের প্রগাঢ় ভালোবাসার সম্পর্ক। শান্তিপুর শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুধাময় প্রামানিক তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলেক রেখে মারা যান বেশ কিছু বছর আগে। পরবর্তীতে তার বড় মেয়েও মারা যান। পরপর স্বজন বিয়োগের যন্ত্রণা হয়তো সহ্য করতে পারিনি ময়না-টাপু। সেই স্বজন হারানোর যন্ত্রণায় ক্রমশ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে ময়না-টাপু। পাড়ার ছেলেদের উদ্যোগে একটি সুতোর দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। মানসিক সমস্যার কারণে সে কাজ স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। কিন্তু পেটের জ্বালা মেটাতে বোনের হাত ধরে সারাদিন চেয়েচিন্তে খাবার জোগাড় করে দুই ভাইবোন। তবে রাতে তাদের জরাজীর্ণ পৈত্রিক ভিটেতেই ফিরে আসে টাপু-ময়না। 

ময়না-টাপুর প্রতিবেশীদের দাবি, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ায় সবসময়য় এক মাথা চুল দাড়িতে মুখ ভরে থাকে টাপুর। তাঁদের ভাইবোনের পরিস্কার-পরিছন্ন রাখার ব্যবস্থা করেছে শান্তিপুরের সামাজিক সংগঠন নবজাগরণ। খাবারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তারা। আবার প্রতিবেশীদের মধ্যেও অনেকেই ময়না-টাপুর জন্য সকালে-রাতে খাবার দিয়ে যান। যদিও এখনও চিকিৎসা করলে ওদের সুস্থ করে তোলা যাবে কিনা সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি কেউ। আজ ভাইফোঁটা। ঘটা করে নাই বা দিলো ফোঁটা, তবে মানসিক সমস্যার মধ্যেও বোনকে বুকে আগলে রাখা এবং ভাইয়ের প্রতি বোনের অগাধ বিশ্বাস ভরসা ভালোবাসা নজিরবিহীন বলেই মনে করেন সুশীল সমাজ।