ভাইকে মনপসন্দ মিষ্টি খাওয়াতে সকাল থেকেই দোকানে-দোকানে লম্বা লাইন ক্রেতাদের

প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ রকমের মিষ্টান্ন ভাইফোঁটা উপলক্ষে প্রস্তুত করেছেন গনেশ পাল।

ভাইকে মনপসন্দ মিষ্টি খাওয়াতে সকাল থেকেই দোকানে-দোকানে লম্বা লাইন ক্রেতাদের

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: কালীপুজো শেষ! উৎসবের মরশুমের শেষলগ্নে ভাইদের ফোঁটা দিতে মিষ্টির দোকানে-দোকানে ভিড়। প্রিয় ভাই-দাদাদের জন্য আগেভাগে পছন্দের মিষ্টি কিনতে বুধবার সকাল থেকেই নদীয়ার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ক্রেতাদের লম্বা লাইন।

জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেল ৩'টে ২৭ মিনিট পর্যন্ত প্রতিপদ। তিনটে ২৮ মিনিট থেকে শুক্ল দ্বিতীয়া শুরু হবে চলবে আগামীকাল দুপুর ২'টো ৩ মিনিট পর্যন্ত। আর এই উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকেই মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন। নদীয়ার ফুলিয়ার কালিপুরে গনেশ পালের, মিষ্টির দোকানে বড় বড় বাজারের ব্যাগ নিয়ে দূর দুরান্ত থেকে মোটরসাইকেল, টোটো এমনকি ট্রেনে বাসে করেও হাজির হচ্ছেন ক্রেতারা মিষ্টি সংগ্রহের জন্য। 

ক্রেতারা জানাচ্ছেন, ‌তাদের নিজ নিজ এলাকায় মিষ্টির দোকান থাকলেও ১০০ টাকায় দই মেলে এখানেই। অন্যান্য মিষ্টির দোকানে যেখানে দশ টাকা থেকে শুরু, সেখানে এই দোকানের সর্বোচ্চ দাম ১০ টাকা। ৫ টাকা ৬ টাকা ৭ টাকায় যেমন সন্দেশ, কালাকাঁদ, ছানার মিষ্টি, পানতুয়া, রসগোল্লা, ক্ষীর রোল, ছানা এবং সুজির কেক, বরফি সন্দেশ, ইলিশ মাছের পেটি, মিষ্টির ফল, কালোজাম, চমচম, লর্ড চমচম, আরো কত কি! 

সারা বছর কুড়ি পঁচিশ রকমের মিষ্টি থাকলেও, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ রকমের মিষ্টান্ন ভাইফোঁটা উপলক্ষে প্রস্তুত করেছেন গনেশ পাল। যদিও একসাথে সব মিষ্টি দেখার অথবা কেনার সৌভাগ্য হচ্ছে না কারোরই। কিছু মিষ্টান্ন শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই নিমেশের মধ্যে ফুরিয়ে যাচ্ছে অন্য একটি ধরন। সীতাভোগ, মিহিদানা, বোঁদে, বটফল কেজি কেজি বিকোচ্ছে । বড় বড় বাজারের ব্যাগ নিয়ে দূর দুরান্ত থেকে ভোর পাঁচটা থেকে যে পরিমাণ ভিড় আমরা লক্ষ্য করলাম, তা দুপুরে বা বিকালে কি অবস্থা হবে, তা অনুমান করুন আপনারাই। মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গণেশ বাবু অবশ্যই জানান, প্রথমে তিনি চানাচুর তৈরীর কারখানায় কাজ করতেন, নিজস্বভাবে কিছু করার মানসিকতা তৈরি হয় সেখান থেকেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এর পাশে বাড়ি হওয়ার কারণে, চপ এবং চায়ের দোকান ভালোই চলছিলো তবে তা নয়জনের পরিবার সদস্য খরচ চালানোর উপযোগী ছিল না। এরপর সিদ্ধান্ত নেন মিষ্টির দোকানের, 

বর্তমানে শুধু তার পরিবার নয় ১৪ জন কর্মচারীর পরিবার সদস্যদের পেট চলে এই দোকানের ভরসায়। ময়রা সম্প্রদায় ভুক্ত না হওয়ায়, প্রথমের দিকে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিলো তাকে। তবে কর্মচারীদের মিষ্টান্ন প্রস্তুত পদ্ধতি, মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। কম দামে মিষ্টি অথবা দই বিক্রির জন্য অন্যান্য মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের কটুক্তি ও যথেষ্ট শুনতে হয়েছে তাকে।

 তার মতে ব্যবসায়িক পদ্ধতি যার যার নিজস্ব, একেবারে সামান্য অর্থ লাভ করে বেশি বিক্রির চিন্তাভাবনা এই দোকান সফলতার পেছনে প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করেন। তবে নিন্দুকেরা অনেকেই নানা কথা রটালেও, এই দোকানের ক্রেতারা অবশ্য প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা বলেন, কম দামে সেরা জিনিস খুঁজে বের করে ক্রেতারাই। বারো মাসে তেরো পার্বণ এবং নানান অনুষ্ঠানের শান্তিপুরের অধিবাসীরা মিষ্টি চিনতে ভুল করে না।

 অন্য দোকানে ৫০০ টাকার দই মিষ্টি কেনার টাকায়, এই দোকানে ৪০০ টাকাতেই মিটে যায়, তাই বাজারের ব্যাগে নিয়ে মিষ্টি কিনতে আসতে হয়। অনেকে জানালেন, বেশ কিছুটা কম হওয়ার কারণে, এই পথ দিয়ে যাবার সময় অপ্রয়োজনেই দই মিষ্টি নিয়ে যাওয়া হয় লোভের বশবর্তী হয়ে।
একদিকে যেমন টাকার মাধ্যমে চলছে বেচাকেনা অন্যদিকে, অনলাইনে প্রদেয় অর্থের মেসেজ বেজে উঠছে নিত্য অহরহ।