কলা গাছের বাকল থেকে তন্তু নিষ্কাশনের অভিনব উদ্যোগে, উপার্জনের নতুন পথ দেখছেন কৃষকরা

কেমিক্যাল কৃত্রিম যে কোনও কিছু উৎপাদনে এখন থেকেই রাশ টানতে চাইছেন আগামী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে। প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অন্যতম গাছ।

কলা গাছের বাকল থেকে তন্তু নিষ্কাশনের অভিনব উদ্যোগে, উপার্জনের নতুন পথ দেখছেন কৃষকরা

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: ক্রমশ বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে প্রাকৃতিক সম্পদ। বহুদিন আগে থেকেই চিন্তিত পৃথিবীব্যাপী কাজ করা পরিবেশবিদরা। প্রাকৃতিক উপাদানের পুন: ব্যবহারের কথা বলে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত। তবে দেরিতে হলেও বুঝেছে সরকার। ভূগর্ভস্থ জল ,খনিজ তেল, সূর্যের রশ্মি, সবকিছু অপচয়ের হাত থেকে রক্ষার বিভিন্ন পন্থা নিয়েছেন তারা। 

অন্য দিকে কেমিক্যাল কৃত্রিম যে কোনও কিছু উৎপাদনে এখন থেকেই রাশ টানতে চাইছেন আগামী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে। প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অন্যতম গাছ। বিভিন্ন গাছের পাতা ফুল ফল শেকড় কাণ্ড রস নানাভাবে সংগৃহীত হয়ে তৈরি হচ্ছে ঔষধ পথ্য প্রসাধনী আরও কত কি! বন জঙ্গল শেওলা কচুরিপানাও এখন পুনঃ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে নানাভাবে।

সম্প্রতি কলাগাছের উপর নজর পড়েছে পরিবেশবিদদের। মোচা অথবা গলার কাঁদি নেওয়ার পর গাছের মধ্যে থাকা থোড় খাদ্য হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু সুসজ্জিত তার বাকল এ যাবৎ কাল সামান্য ব্যবহার হতো গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে তবে তা গৃহস্থ বাড়ির ক্ষেত্রে। বিঘের পর বিঘে কলাবাগানে, জমিতেই পচানোর চেষ্টা চলতো। এতে পরবর্তী চাষে অনেকটাই দেরি হয়ে যেতো। তার ওপর উপযুক্ত জল না পেলে পচতে লাগতো আরো বেশি সময়।

 বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতি প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের মেশিন আসার ফলে, এই বাকুল থেকে তন্তু এবং দড়ি উৎপাদন দেশের বাইরে আফ্রিকা, এবং দেশের মধ্যে কেরালায় বিগত ১৫ বছর যাবৎ । বাংলায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে এই চল। 

নদীয়ার শান্তিপুর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধের পাড়া এলাকায় আজ এক প্রতিনিধি দল স্থানীয় কলা চাষীদের নিয়ে হাতে-কলমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে একটি অনুষ্ঠান করেন। যেখানে কৃষকদের বোঝানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মাসে 50 থেকে 7 টন অর্থাৎ ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকার কলা গাছের তন্তু র চাহিদা রয়েছে। যার মাত্র ১% উৎপাদন হচ্ছে বাংলায়। 

এই মেশিনের দ্বারা ৫ থেকে ৬ টি প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ উপকারীজল স্প্রে করার মাধ্যমে একদিকে যেমন ফলন বৃদ্ধি হয় অন্যদিকে গাছের শ্রী বৃদ্ধি ঘটে। ২৬ দিনে ৮০ হাজার টাকা দামের মেশিনে ৫০০ কেজি তন্তু উৎপাদন হয় যা প্রতি কেজি ১২০ টাকা ধরে 60000 টাকার ব্যবসা দিতে পারে। ফেলে দিয়া গাছের বাকল সংগ্রহ করা, পরিবহন, বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক, মেশিনের অপচয়, ইলেকট্রিক এমনকি হিসাবরক্ষণের মতন পুঙ্খানুপুঙ্খ খরচ একত্রিত করে দাঁড়ায় পঁচিশ হাজার টাকা মাত্র। 

উদ্বৃত্ত 35 হাজার টাকা প্রতি মাসে একটি মেশিন থেকে লাভ দাঁড়ায়। বর্তমানে এই মেশিন কিনতে নাবার্ডের মতন সংস্থা এগিয়ে এসেছে সরকারি অনুদানও মেলে যথেষ্ট। বেকার ছেলেমেয়েরা অথবা বাড়ির মহিলারাও স্বনির্ভ র দল গঠন করে অথবা এককভাবে অনাসেই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এই উৎপাদনের মাধ্যমে। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের অভিনব এই পদ্ধতি নিজের হাতে-কলমে করে খুশি কৃষকরাও। শান্তিপুর ভাগীরথীর  অববাহিকায় আদিবাসী বহু কৃষক পরিবার থেকে আজ অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে। তাদের উচ্ছাস উদ্দীপনা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় আগামীতে বিকল্প আয়ের রাস্তা দেখছেনকৃষকরাই।