তালিবান আছেই তালিবানে! আফগানিস্তানে প্রশ্নের মুখে মহিলাদের উচ্চশিক্ষা

নারীদের উচ্চ শিক্ষার অধিকার নিয়ে মৌলবাদী শাসকর স্পষ্ট করেছে, এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানোর আগে অবধি মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার অধিকার থাকছে না দেশে।

তালিবান আছেই তালিবানে! আফগানিস্তানে প্রশ্নের মুখে মহিলাদের উচ্চশিক্ষা

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: আফগানিস্তানে মহিলাদের অধিকার এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে নিন্দায় সরব আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু তাতে যে তালিব শাসকদের কিছু যায় আসে না, তা স্পষ্ট করে দিল তারা। এবার সেদেশে মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার উপরে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। 

নারীদের উচ্চ শিক্ষার অধিকার নিয়ে মৌলবাদী শাসকর স্পষ্ট করেছে, এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানোর আগে অবধি মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার অধিকার থাকছে না দেশে। এর ফলে কার্যত নয়ের দশকের পরিস্থিতি ফিরে এল আফগানিস্তানে। এদিকে মেয়েদের উপর নয়া ফতোয়ায় বিরক্ত আমেরিকা তালিবানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গত বছরের অগাস্টে নতুন করে আফগানিস্তান দখল করার পর তালিবান আশ্বাস দিয়েছিল, এটা তালিবান ২.০। যারা নারী স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়গুলিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু সেই কথা যে স্রেফ কথার কথা ছিল, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল কয়েক দিনের মধ্যেই।

 ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কালেও মেয়েদের উচ্চশিক্ষার অধিকার ছিল না। এছাড়াও পরকীয়া, চুরির মতো ঘটনায় প্রকাশ্যে বেত মারা এমনকী মেরে ফেলার ঘটনাও ছিল স্বাভাবিক। সেই বিষয়গুলিই নতুন করে কার্যকর হচ্ছে। গত কয়েক মাসে একের পর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে মহিলাদের উপরে। মিডল স্কুল ও হাই স্কুলে পড়াশোনায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। মেয়েদের কাজ করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও রাস্তায় একা চলাফেরা, বোরখা পরা নিয়েও কঠোর নিয়ম জারি করা হয়েছে। সঙ্গে একজন পুরুষ না থাকলে পার্ক ও জিমে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না মেয়েদের। মঙ্গলবার তালিবানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী নেদা মহম্মদ নাদিম আফগানিস্তানের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চিঠি পাঠিয়েছেন। 

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মহিলাদের উচ্চশিক্ষার উপরে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা অবধি মহিলাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া যাবে না। উল্লেখ্য, তিন মাস আগেই আফগানিস্তানের হাজার হাজার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বস্তুত তাঁদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল নয়া নির্দেশে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, শাসন ক্ষমতায় ফেরার পর প্রগতিশীল ভাবনার কথা বললেও তালিবানরা আসলে মধ্যযুগীয় আফগান শাসনকেই ফের কায়েম করতে চাইছেন নিজেদের দেশে। বাকি বিশ্বের নিন্দায পরোয়া করছে না। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট আফগানিস্তান দখল করে তালিবান। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে তাদের শাসন। 

৯০-র দশকে যখন আফগানিস্তান তালিবানের দখলে ছিল, সেই সময় একাধিক কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা বা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকারও ছিল না। তবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতা দখল করার পর তালিবান জানিয়েছিল, তারা বদলে গিয়েছে। বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আইন-কানুন তৈরি করা হবে। কিন্তু সে কথা মুখেই রয়ে গিয়েছে, কাজে হয়েছে ঠিক উল্টোটা। একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তালিবান শাসকরা। মহিলাদের কাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে রাস্তায় একা চলাফেরা, বুরখা পরা নিয়েও কঠোর নিয়ম জারি করা হয়। সেই নিয়মই আরও এক ধাপ কড়া হল তালিবানের নতুন ফতোয়ায়।