ক্রমশ রং হারাচ্ছে পদ্মা পাড়ের রিকশা আর্ট

বাহারী ও শৌখিন পরিবহন হিসেবে ঢাকায় রিকশার আগমন ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর।

ক্রমশ রং হারাচ্ছে পদ্মা পাড়ের রিকশা আর্ট

দেবযানী সরকার, ঢাকা: রিকশার কথা বললে প্রথমেই মনে আসে ঢাকার নাম। রিকশার  শহর বলেই গোটা বিশ্বে একটা আলাদা পরিচিতি রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী শহরটির। বিলাসবহুল গাড়ির ভিড়ে আজও রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে রিকশার  কদর একটুও কমেনি। কিন্তু, ডিজিটাল যুগে ক্রমশই ফিকে হচ্ছে পদ্মা পাড়ের বিখ্যাত ও উজ্জ্বল রিকশা চিত্র। 

ঢাকা শহরের অলি-গলি থেকে রাজপথ। যে দিকেই তাকাবেন সেদিকেই চোখে পড়বে ঊজ্বল রঙের বাহারি রিকশা। আর এই কারণে ঢাকাকে  বলা হয় রিকশার শহর। তবে শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় কয়েক লক্ষ রিকশা চলাচল করে। এই বিপুল পরিমাণ রিকশার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভর করে আছে দেশটির এক বিশাল জনগোষ্ঠী।  বিলাসবহুল গাড়ির ভিড়ে রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে রিকশার কদর একটুও কমেনি। মধ্যবিত্তদের বাহন বলা হলেও উচ্চবিত্তরাও দামি গাড়ি ছেড়ে কখনও কখনও রিকশাকে বেছে নেন।

রিকশার ইতিহাস বলছে, বাহারী ও শৌখিন পরিবহন হিসেবে ঢাকায় রিকশার আগমন ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর। তখন থেকেই সূত্রপাত রিকশাচিত্রের, পঞ্চাশ ও ষাটের দশক থেকে যা এ অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।  ১৯৫০ সালে রিকশায় ফুল, পাখি এমনকি জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের ছবি আঁকারও প্রচলন ছিল। ষাটের দশকে চলচ্চিত্র তারকাদের প্রতিকৃতি, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ আঁকতেন শিল্পীরা। এ ছাড়া গ্রামীণ জনজীবন, প্রাকৃতিক দৃশ্য,  সিনেমার দৃশ্য, পশুপাখির ছবি রিকশাচিত্রকে বৈচিত্র্যময় করেছে। রিকশা আর্টে ব্যবহৃত হয় উজ্জ্বল রঙ । ফ্লুরোসেন্ট নীল, সবুজ, লাল, হলুদ, গোলাপি- এই রঙগুলো বেশি ব্যবহার হয়। হালকা রঙের ব্যবহার নেই বললেই চলে। খুব দূর থেকেও চোখে ধরা পড়তে পারে সবচেয়ে উজ্জ্বল রঙগুলো। একসময় রিকশার শরীরজুড়ে থাকত বাহারি রঙের পেইন্টিং।  

দেশ-বিদেশের বড় বড় প্রদর্শনীতে ঐতিহ্য হিসেবে কদর আছে বাংলাদেশের রিকশা আর্ট-এর। কিন্তু ডিজিটালাইজেশনের যুগে নিজের গরিমা হারিয়েছে রিকশা আর্ট। এখন পোস্টার প্রিন্ট করিয়ে রিকশার পেছনে আটকে দেওয়া হয়। ফলে চাহিদা এবং পারিশ্রমিক, দুই কমে যাওয়ার ফলে রিকশা আর্টে আগ্রহ হারিয়েছেন শিল্পীরা। তবে এখনও বাংলাদেশের অনেকেই এখনও চান পথে-ঘাটে চলতে চলতে পুনরায় বেঁচে উঠুক রঙে রাঙানো রিকশা আর্ট।