১৫'র কিশোরীর সঙ্গে ৩৫-এর যুবকের বিয়ের তোড়জোড়, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাজল 'না' সানাই

পরিবারের তরফ থেকে তার কথা না শোনায় অবশেষে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দ্বারস্থ হয় ওই নাবালিকা।

১৫'র কিশোরীর সঙ্গে ৩৫-এর যুবকের বিয়ের তোড়জোড়, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাজল 'না' সানাই

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, বিয়ে রুখতে স্কুলের দ্বারস্থ নবম শ্রেণীর ছাত্রী।  ঘটনাটি ঘটেছে, হুগলি জেলার ধনিয়াখালী বিষ্ণুপুর এলাকায়। ছাত্রীর সাহসিকতার জন্য পুরস্কার ঘোষণা স্কুল ও প্রশাসনের। ছাত্রীর এই পদক্ষেপে একদিকে যেমন শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায় অন্যদিকে ছাত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ গ্রামের মানুষজন।

জানা গিয়েছে, সোমবার স্কুল চলাকালীন ওই ছাত্রী স্কুলের দিদিমণিদের একটি আবেদন পত্র জমা দেয়। অভিযোগ, তাতে লেখা ছিল পরিবারের তরফ থেকে তার বিয়ের ঠিক করা হয়েছে আগামী ১০ ফাল্গুন। একদিকে বিয়ের বয়স হয়নি অন্যদিকে আরও পড়াশোনা করতে চায় বলে জানায় ওই ছাত্রী। এদিকে পরিবারের তরফ থেকে শুরু করে দেওয়া হয়েছে বিয়ের সমস্ত আয়োজন। পরিবারের লোকেরা নিমন্ত্রণও শুরু করে দিয়েছেন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। 
অন্যদিকে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা সমস্ত কিছু জানতে পেরে প্রশাসনের দারস্থ্ হন। খবর দেওয়া ধনিয়াখালী থানায় এবং স্থানীয় প্রশাসনকে।ঘটনার খবর জানতে পেরে স্কুলে আসে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরা। 

পুলিশের তরফ থেকে স্কুল থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় ওই ছাত্রীকে এবং বিয়ের বয়স না হওয়া পযন্ত তার যাতে বিয়ে দেওয়া না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক করা হয় পরিবারের সদস্যদের। অন্যথা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের তরফে। 

প্রশাসন সূত্রে খবোড়, পারাম্বুয়া জগদ্ধাত্রী উচ্চ বিদ্যালয় ক্লাস নাইনের ছাত্রী ওই নাবালিকার দেখাশোনার পর্ব মেটে সরস্বতী পুজোর দিন। বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে যায় আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে। শেওড়াফুলির বছর ৩৫ এর এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ের ঠিক করে বাড়ির লোক। যদিও বিয়ের কথা যখন চলছিল তখন থেকেই বিয়ে করবে না বলে পরিবার কে বার বার জানায় ওই নাবালিকা।

সূত্রের খবর, পরিবারের তরফ থেকে তার কথা না শোনায় অবশেষে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দ্বারস্থ হয় ওই নাবালিকা।খবর পেয়ে স্কুলে আসে ধনিয়াখালি থানার পুলিশ। স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে নাবালিকার বাড়িতে এসে প্রশাসনের তরফ থেকে বোঝানো হয় ১৮ বছরের নিচে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ। একই সঙ্গে পুলিশের তরফ থেকে নাবালিকার এই সাহসিকতার জন্য বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করেন পুলিশ অধিকর্তারা। 

এদিকে পুলিশে প্রশাসনের বোঝানোর পর নিজের ভুল স্বীকার করে নেয় নাবালিকার মা ডলি রায়। তিনি জানান তাদের অভাবের সংসার, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় সেই কারণেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছিলেন। এখন তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন আগামীতে যতদিন না মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে ততদিন তার বিয়ে নিয়ে জোর যার করবে না।

অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশ কুমার মুখোপাধ্যয় তাঁর স্কুলের ছাত্রীর এই সাহসিকতার প্রশংসা করেন এবং ছাত্রীর সাহসিকতার পুরস্কার ঘোষণা করেন।  স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য প্রসেনজিৎ কোনার জানান, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বার বার সচেতনতা প্রচারের ফল ছাত্রীর এই সাহসিকতা।