৩ পুরুষ ধরে চলছে গঙ্গাজল বিক্রির কাজ, জানুন অশোক হালদারের অজানা কাহিনী

নন্দলাল বাবা মোহন চন্দ্র এবং তিনি অশোক হালদার। তিন প্রজন্ম ধরে গঙ্গাজল বেচেই তাদের পরিবার সদস্যদের জীবন জীবিকা।

৩ পুরুষ ধরে চলছে গঙ্গাজল বিক্রির কাজ, জানুন অশোক হালদারের অজানা কাহিনী

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের তত্ত্বাবধানে, গঙ্গাজল বিক্রির ব্যবস্থা চালু হলেও, রানাঘাটের অশোক হালদারের ব্যবসায় ভাটা পড়েনি এতটুকু। রানাঘাট মূল শহরের প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা। তাও আবার পৌঁছতে হয় চূর্ণী নদী পেরিয়ে। সেই কারণে ২ থেকে ৩ টাকা লিটার প্রতি গঙ্গাজল কিনতে পিছুপা হন না এ প্রজন্মের ব্যস্ত ছেলেমেয়েরা।

ঠাকুর দাদা, নন্দলাল বাবা মোহন চন্দ্র এবং তিনি অশোক হালদার। তিন প্রজন্ম ধরে গঙ্গাজল বেচেই তাদের পরিবার সদস্যদের জীবন জীবিকা। ৬০ বছর বয়সী অশোক হালদার, আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাবার সঙ্গে সহযোগিতা করত এই ব্যবসায়। তখন অবশ্য দাঁড় টানা নৌকায় জল আনতেন চূর্ণী নদী বেয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার জলপথ পেরিয়ে ভাগিরথীর বলাগড় ঘাট থেকে। এখনও তাই আনেন তবে, নিজস্ব ইঞ্জিন চালিত ভটভটি নৌকাতে। ২০০৮ সালের বাবা মারা যাওয়ার পর, অন্য কোনও ছেলেরা এই পেশায় আসতে না চাইলেও, পরম্পরা রাখতে এবং ক্রেতাদের চাহিদায় এই বয়সেও নিয়মিত সকাল ছয়টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তিনি। তবে প্রতিযোগী বলতে কেউ নেই এই ব্যবসায়, সে বিষয়ে তিনি জানান, হাড় ভাঙ্গা খাটনি করার সংখ্যা কমে যাচ্ছে দিনে দিনে। 

ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা শেখানোর পর সুপাত্রস্থ করেছেন এই গঙ্গাজল বিক্রি করেই। ছেলে ছোটখাটো ব্যবসা করলেও, তার সঙ্গেই সময় দেয়। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই রানাঘাট ছোট বাজার ফুটপাতের ধারে এই গঙ্গাজল বিক্রির কথা জানেন সকলেই।  পরিষ্কার শুদ্ধ গঙ্গাজল পেতে বলাগড় ঘাটে পৌঁছানোর ঝঞ্ঝাট এবং সময় বাঁচাতে ৩০ টাকা দিয়ে ১০ লিটার জল কিনে নিয়ে যাওয়া অনেক ভালো।

বিক্রেতা অশোক হালদার জানান,  শ্রাদ্ধ উপনয়ন বিবাহ যেকোনও পুজো সর্বত্রই লাগে গঙ্গাজল। বহু পূর্বে তিন পুরুষ আগে ঠাকুর দাদা চালাতেন নৌকা, তিনিই সমগ্র  রানাঘাটবাসীকে এনে দিতেন গঙ্গাজল। কাকা জ্যাঠা , এবং তাঁর অন্যান্য ভাইয়েরা বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হলেও সেই পরম্পরা ধরে রাখে বাবা এবং তিনি। সকাল ছটায় জল এনে, ফুটপাতের ওপরেই বসানো বড় ট্যাঙ্কে, ইলেকট্রিক্যাল মোটর চালিয়ে জল তোলা হয়, সারাদিন সহ সন্ধ্যে নটা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। 

তিনি বলেন, ''মোটামুটি ৬০০ লিটার জল বিক্রি হয় প্রতিদিন, তার মধ্যে আজ যেমন মাঘী পূর্ণিমা, সেই উপলক্ষে একটু বেশি জল বিক্রি হয়। এরকমই বিভিন্ন পুজো অর্চনার দিনে বিক্রির পরিমাণ হাজার লিটার পৌঁছে যায়। ৩ টাকা লিটার হিসাবে বিক্রি করলেও, বড় বড় ড্রাম ভরে যারা নেন, তাদের জন্য পাইকারি রেট। তবে একদিন দোকানদারি করলে তার পরে দুদিন আর বসা হয় না, একদিকে যেমন বড় বড় জলভর্তি যার সরানো নাড়ানোর খাটুনি অন্যদিকে, ক্রেতাদের জল ফুরানোর সামঞ্জস্য রেখে সপ্তাহে দু তিন দিন চলে এই ব্যবসা।''